বাবা হচ্ছেন সন্তানের জন্য বটবৃক্ষের মত শীতল ছায়া দিয়ে পরম যত্নে আগলে রাখে কিন্তু সেই বাবাকে আবার অনেক নিষ্ঠুর সন্তান স্বার্থশেষে আস্থাকূড়ে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। তখন বাবার জীবনে নেমে আসে সীমাহীন কষ্ট। সন্তান কে যে বাবা এত কষ্ট আর শ্রম দিয়ে গভীর যত্নে লালন পালন করে বড় করেছেন। তার এখন নিজের ঘরে স্থান হয় না, হয়েছে খোলা ফাঁকা জরাজীর্ণ ছোট একটি ঝুপড়ি ঘরে। এর চেয়ে দুঃখের কি বা হতে পারে?
শানু মৃধা বয়স আনুমানিক ৮৫ বছর। বয়সের ভারে আর নানা রকম অসুখ বিসুখ আর অনাহারে তেমন হাঁটাচলা ও কাজকর্ম করতে পারেন না। প্রয়োজনীয় খাবার, চিকিৎসাসহ অন্যান্য সেবা-যত্ন না পাওয়ায় এখন তিনি অনেকটাই মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। লোক দেখলেই বলে ‘ভাত দে বাবো মোরে এ্ক থাল ভাত আইনা দে’ তার এই দুর্বিষহ জীবন দেখে আঁতকে ওঠেন প্রতিবেশীরা। এমনই এক নিষ্ঠুর ঘটনা ঘটেছে আমতলী উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের উত্তর কুকুয়া গ্রামের ৭ নং ওয়ার্ডে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, শানু মৃধার একসময় জমি জমার কোন কমতি ছিল না। দুই ছেলে আর তিন মেয়ে রয়েছে তার। শানু মৃধা বৃদ্ধ হওয়ায় ছোট ভাই ও বোনদের সম্পত্তি না দিয়ে কৌশল করে বড় ছেলে সুলতানা মৃধা সব সম্পত্তি নিজের নামে লিখে নেন। সম্পত্তি লিখে নেওয়ার কিছুদিন পর থেকে কিছুটা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিনি। মাঝেমধ্যে অস্বাভাবিক আচরণের কারণে কোনো ধরনের চিকিৎসা না করে প্রায় এক বছর ধরে তাকে ফেলে রেখেছেন ফাঁকা একটি ঝুপড়ি ঘরে।
প্রতিবেশী কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে প্রয়োজন মাফিক খাবার, সুচিকিৎসা, সেবা-যত্ন না পাওয়ায় শানু মৃধা ধীরে ধীরে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছেন। বড় ছেলে সুলতানা মৃধা যে পরিমাণ খাবার দেয়, তাতে তার ক্ষুধা পূরণ হয় না। এই কারণে যে মানুষই তার পাশে দিয়ে যাতায়াত করে তখনই চিৎকার করে বলে ‘বাবো মোরে এক থাল ভাত দে’ শুনে খুব কষ্ট লাগে।
স্থানীয় বাসিন্দা সেকান্দার বেপারী জানান, শানু মৃধাকে পরিবারের কেউ ভালোভাবে দেখাশোনা করে না। ছেলের কাছে খাবার চাইলেই তাকে করা হয় মারধর। ঝুপড়ি ঘরের চৌকিতেই তাকে মশার কামড়ে অবহেলা আর অযত্নে পড়ে থাকতে হয়। অসহায়ভাবে পেট ভরে খেতে না পেয়ে অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ভালো সেবা-যত্ন, চিকিৎসা,পর্যাপ্ত খাবার পেলে হয়তো বা ভালোও হতে পারেন শানু মৃধা ।
এ বিষয়ে বড় ছেলে সুলতানা মৃধা মারধর ও নির্যাতনের কথা অস্বীকার করে বলেন, জমি লিখে নেয়নি। টাকার বিনিময়ে জমির দলিল দিয়েছেন। এ বিষয়ে আর কিছু বলতে চাই না।
কুকুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন আহমদ মাসুম তাং বলেন, শানু মৃধার জমি লিখে নিয়ে গেছে এ বিষয় আমি কিছু জানি না তবে সুলতান বাজে লোক তার বাবা শানু মৃধার খোঁজ খবর সে আগে থেকেই নেয় না, পুলিশ প্রশাসনকে বলেছি ব্যবস্থা নিতে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, আমতলী উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের শানু মৃধার ছেলে সুলতান মৃধা তার বাবার ভরণ-পোষণ দিচ্ছে না এই মর্মে সোশ্যাল মিডিয়ার ভিডিও দেখে রাতেই সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলেছি। তিনি সেখানে যাবেন, তদন্ত করে বিষয়টি সত্যিকার অর্থে যদি এমন হয় তাহলে ওই ব্যক্তির বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা এবং তার বাবা শানু মৃধার ভরণ-পোষণের জন্য আমরা তৎপর আছি।