ইসরায়েলি পুলিশবাহিনী আল-আকসা প্রাঙ্গণে হামলার পর অধিকৃত পশ্চিম তীরে যে সংঘর্ষ শুরু হয়েছিল তাতে কয়েক ডজন প্যালেস্টাইনি আহত হয়েছেন। মসজিদ প্রাঙ্গণে সহিংসতার এই ঘটনায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ আলোচনার জন্য এক জরুরি অধিবেশনের ডাক দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার ৬ এপ্রিল ওয়াফা নিউজ এজেন্সি এবং বার্তা সংস্থা রয়টার্স থেকে এই তথ্য জানা যায়।
ইসরায়েলি পুলিশবাহিনী নাবলুসে একটি বিষাক্ত গ্যাস দিয়ে ক্যানিস্টার নিক্ষেপ করার সময় কমপক্ষে ১২ জন আহত হয়েছেন। সংস্থাটি বলেছে, উত্তরাঞ্চলীয় শহর হেব্রনের কাছে বেইত উমমার শহরে গোলাবারুদ দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। বিত উমর-এর কয়েক ডজন মানুষ বিষাক্ত গ্যাসে শ্বাসরুদ্ধ হওয়ার খবরও জানিয়েছে ওয়াফা নিউজ এজেন্সি। সংস্থাটি জেনিন এবং বেথলেহেম শহরের কাছে প্যালেস্টাইনি ও ইসরায়েলি বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের কথাও জানিয়েছে।
কূটনীতিকরা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে সহিংসতা নিয়ে আলোচনার জন্য একটি জরুরি অধিবেশনের ডাক দিয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও চীনের অনুরোধে রুদ্ধদ্বার বৈঠকটি ডাকা হয়।
এছাড়াও জেনিন এবং বেথলেহেম শহরের কাছে প্যালেস্টাইনি ও ইসরায়েলি বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের কথা জানিয়েছে ওয়াফা নিউজ এজেন্সি।
মালয়েশিয়া আল-আকসায় হামলার নিন্দা জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্দেশে ইসরায়েলকে জবাবদিহি করার আহ্বান জানায় তারা। দেশটির প্রশাসনিক রাজধানী থেকে এক বিবৃতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘ইসরায়েলি বাহিনীর কর্মকাণ্ড বেআইনি, অবমাননাকর। তারা প্যালেস্টাইনিদের মানবাধিকার এবং ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম স্থানের পবিত্রতা লঙ্ঘন করেছে।’
এই ঘটনায় বুধবার তুরস্কের ইস্তাম্বুলের ফাতিহ মসজিদের বাইরে আল-আকসা মসজিদ থেকে জোরপূর্বক সরিয়ে নেওয়া প্যালেস্টাইনি মুসল্লিদের সমর্থনে একটি বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভকারিরা প্যালেস্টাইনি পতাকা নেড়ে সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে স্লোগান দেয়।
জাতিসংঘে প্যালেস্টাইনি রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুর বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে আল-আকসা মসজিদে ইসরায়েলি কর্মকাণ্ডের নিন্দা করে বলেন, ওই স্থানে ধর্মীয় ঐতিহ্য পালন করা প্যালেস্টাইনি মুসলিমদের অধিকার।
মনসুর বলেন, আকসা মসজিদে পবিত্র রমজান মাসে এবং অন্য যেকোন সময়ে নামাজ আদায় করা প্যালেস্টাইনি মুসলিমদের অধিকার। ইসরায়েলের দখলদার কর্তৃপক্ষের মুসলিমদের প্রার্থনার সময় নির্ধারণ করে দেবার কোন অধিকার নেই।
২২ সদস্য দেশের আঞ্চলিক সংগঠন আরব লীগ আল-আকসা মসজিদে অভিযানের বিষয়ে একটি জরুরি বৈঠক করে। লীগের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হোসাম জাকি আল জাজিরাকে বলেন, ‘আমরা সম্পূর্ণভাবে ইসরায়েলের সরকারকে দোষারোপ করছি।’
তিনি বলেন, আল-আকসায় ঝড় তোলার জন্য ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর আরও একটি অজুহাত চলবে না। তাদের অজুহাত কখনো ফুরায় না। তারা সবসময় আপনাকে বলে, সেখানে যুবকদের ব্যারিকেডিং ও বন্দুক সংগ্রহের বিরুদ্ধে অভিযান নিয়েছিল। আমরা এটি অনেকবার শুনেছি। এই মুহুর্তে এটি প্রায় অপ্রাসঙ্গিক। এটি এমন একটি সরকার, যা প্যালেস্টাইনি জনগণের ক্ষতি করতে উদ্যত।
আল-আকসা প্রাঙ্গণ পূর্ব জেরুজালেমের একটি মালভূমিতে অবস্থিত। ইসরায়েল ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধে এটিকে দখল করেছিল। মুসলমানদের জন্য প্রাঙ্গণটি ইসলামের তৃতীয়-পবিত্র স্থান বলে পরিচিত। মুসলিমরা বিশ্বাস করেন এখান থেকেই নবী মুহাম্মদ সা. মিরাজে আরোহণ করেছিলেন। ইহুদিরা বিশ্বাস করে, বাইবেলে বর্ণিত ইহুদি মন্দিরগুলো একসময় এখানে দাঁড়িয়ে ছিল। এবং তাদের কাছে এটি টেম্পল মাউন্ট নামে পরিচিত।
প্যালেস্টাইনের জনগণ অতি-ডানপন্থী ইসরায়েলি আন্দোলন নিয়ে চিন্তিত, যারা আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে ইসলামিক কাঠামো ভেঙে সেখানে একটি ইহুদি মন্দির নির্মাণ করতে চায়।