দুবাইয়ের আলোচিত স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খান ওরফে সোহাগ মোল্লা ওরফে রবিউল ইসলাম রবি দেশের ৬৪ জেলায় একটি করে মসজিদ নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন।






বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) দুপুর ১২টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের লাইভ ভিডিওতে এ ঘোষণা দেন তিনি।
হত্যা মামলায় অভিযুক্ত এই প্রবাসী বলেন, “আমি একজন দিনমজুরের ছেলে। আমি ঢাকায় এসে অনেক কষ্ট করেছি। হোটেলে কাজ করেছি। অনেক কষ্ট করে আজ এ অবস্থানে এসেছি। আল্লাহ যদি আমাকে সুস্থ রাখে তাহলে খুব শিগগিরই দেশের ৬৪টি জেলায় ৬৪টি মসজিদ নির্মাণ করব।”






অভিযোগ অস্বীকার
নিজের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলার প্রসঙ্গে আরাভ খান বলেন, “আমার নামে মামলা হয়েছে এ কথা সত্য। তবে আমি কোনো হত্যাকাণ্ডে জড়িত নই। পুলিশ আমাকে অস্ত্র মামলায় জেলে দিয়েছে এ কথা সত্য। তবে আমি দোষী না। আমি অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় জেলে গিয়েছি। আবার জামিনে বেরিয়ে এসেছি। আদালত যদি আমাকে সাজা দেয় তাহলে আমি সে সাজা মাথা পেতে নেব।”
তিনি আরও বলেন, “অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েও সাকিব আল হাসান ভাই আমার স্বর্ণের দোকান উদ্বোধন করেছেন। এজন্য আমি সাকিব আল হাসান ভাইয়ের কাছে কৃতজ্ঞ।”






‘ব্যবসায়িক শত্রুতার জের’
নিজের ব্যবসা প্রসঙ্গে আরাভ খান বলেন, “অনেক কষ্ট করে আমি আমার এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দাঁড় করিয়েছি। এখানে আমার কিছু ব্যবসায়িক প্রতিপক্ষ তৈরি হয়েছে। তারাই আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা রটাচ্ছে।”
গণমাধ্যমে যেসব খবর আসছে সেগুলো পুরোপুরি সত্য নয় বলে দাবি করেছেন আলোচিত এই স্বর্ণ ব্যবসায়ী।
এর আগে, বুধবার বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান দুবাইয়ের হিন্দ প্লাজায় আরাভ জুয়েলারি নামে স্বর্ণের দোকান উদ্বোধন করেন। দোকানটির মালিক কোটালীপাড়া উপজেলার হিরণ ইউনিয়নের আশুতিয়া গ্রামের আরাভ খান।






কোটালীপাড়ায় সমালোচনার ঝড়
এদিকে, হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত ব্যক্তির মালিকানাধীন স্বর্ণের দোকান উদ্বোধন করেছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। এ খবরে কোটালীপাড়া উপজেলায় আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে।
আরাভ খানের পরিবার প্রদত্ত নাম সোহাগ মোল্লা বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সোহাগের বাবা উপজেলার আশুতিয়া গ্রামের দিনমজুর মতিয়ার রহমান মোল্লা। তিনি একসময় বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলায় ফেরি করে তৈজসপত্র বিক্রি করতেন। সেখানেই ১৯৮৮ সালে সোহাগের জন্ম। ২০০৫ সালে চিতলমারি সদরের একটি বিদ্যালয় থেকে সোহাগ এসএসসি পাস করেন। দারিদ্র্যের কারণে এরপরে তার পড়াশোনা করা হয়নি।






সোহাগ মোল্লা থেকে আরাভ খান
২০০৮ সালে চিতলমারী থেকে ভাগ্যের অন্বেষণে ঢাকায় পাড়ি জমান সোহাগ। ঢাকায় এসে নাম পাল্টে তিনি হয়ে যান মোল্লা আপন। জড়িয়ে পড়েন অপরাধ জগতে। পুলিশ সদস্য হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপরাধে ঢাকার একাধিক থানায় তার বিরুদ্ধে ডজনখানেক মামলা হয়।
পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে সোহাগ মোল্লা ওরফে মোল্লা আপন ওরফে রবিউল ইসলাম রবি ওরফে শেখ হৃদি ওরফে আরাভ খান ভারতে কলকাতায় পালিয়ে যান। সেখান থেকে তিনি চলে যান দুবাইয়ে।
সম্প্রতি দুবাইয়ে তার স্বর্ণের দোকান উদ্বোধনের খবর সামনে এলে এলাকায় আলোচনায় ঝড় ওঠে। সবার প্রশ্ন, সোহাগ মোল্লা কীভাবে রাতারাতি এতো টাকার মালিক বনে গেলেন?






ঢাকা ট্রিবিউনের কথা হয় সোহাগ মোল্লা ওরফে আরাভ খানের চাচাতো ভাই ফেরদৌস মোল্লার সঙ্গে। সোহাগের আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার ঘটনায় বিস্মিত তিনিও।
কয়েকদিন আগে সোহাগ তার দুই বোন ও মা-বাবাকে দুবাই নিয়ে যান বলে জানান ফেরদৌস।
গ্রামে ঢেলেছেন কাড়ি কাড়ি টাকা
স্থানীয়রা জানান, সবশেষ প্রায় চার বছর আগে সোহাগ গ্রামে এসেছিলেন। গ্রামে এলেই সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে মোটা অংকের আর্থিক সহায়তা করতেন তিনি।






নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক গ্রামবাসী বলেন, “গ্রামের এমন কোনো খাত নেই, যেখানে সে টাকা খরচ করেনি। তাই তার বিরুদ্ধে গ্রামের কেউ নেতিবাচক কিছু বলতে চায় না। তিনি গ্রামের খোলার মাঠেও অঢেল টাকা ঢেলেছেন।”
স্থানীয় হিরণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাজাহারুল আলম পান্না বলেন, “সোহাগ মোল্লা আর আরাভ খান একই ব্যক্তি। আমার গ্রামেই তার বাড়ি। হঠাৎ করে সে কীভাবে এতো টাকার মালিক হলো এটা আমাদের বোধগম্য না।”






ইউপি চেয়ারম্যান আরও বলেন, “দুই মাস আগে হজ করতে সৌদি আরবে গেলে সোহাগের সঙ্গে আমার দেখা হয়। সে আমাকে দুবাই যাওয়ার অনুরোধ করে। আমার যাতায়াত খরচ, বিমান টিকেট ও স্বর্ণ উপহার দিতে চেয়েছিল। আমি তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করি।”
খোঁজ পায়নি স্থানীয় পুলিশ
আরাভের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে কোটালীপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিল্লুর রহমান ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “সোহাগ মোল্লা ওরফে মোল্লা আপন ওরফে রবিউল ইসলাম রবি ওরফে শেখ হৃদি ওরফে আরাভ খানের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ৯টি ওয়ারেন্ট আমার থানায় এসেছে। আমি ওয়ারেন্টগুলো তামিলের চেষ্টা করেছি। কিন্তু তার কোনো হদিস আমরা পাইনি।”