‘লাই’লাতুল বারাআত’ আরবি শব্দ। তবে শবে বরাত কথাটি ফারসি থেকে এসেছে। শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে ‘শবে বরাত’ বলা হয়।






‘শব’ মানে রাত, ‘বরাত’ মানে মুক্তি। শবে বরাত অর্থ মু’ক্তির রাত। হাদিস শরিফে যাকে ‘নিসফ শাবান’ বা ‘শাবান মাসের মধ্য দিবসের রজনী’ বলা হয়েছে।
ভারতীয় উপমহাদেশ, পারস্যসহ পৃথিবীর অনেক দেশের ফারসি, উর্দু, বাংলা, হিন্দিসহ নানা ভাষায় যা ‘শবে বরাত’ নামেই অধিক পরিচিত।






আগামী ৭ মার্চ দিবাগত রাতে পবিত্র শবে বরাত পালিত হবে।এই দিন ইবাদতের জন্য সর্বোত্তম সময়। মহা’নবী (সা.) রজব মাস থেকেই রম’জানের প্রস্তুতি শুরু করতেন।
তিনি শাবান মাসে সর্বাধিক নফল রোজা ও নফল ইবাদত করতেন। শবে বরাত তথা নিসফ শাবান, অর্থাৎ মধ্য শাবান হলো রম’জানের প্রস্তুতির চূড়ান্ত পর্ব। নবী (সা.) বলেছেন, যখন শাবান মাসের মধ্যতারিখ আসবে, তখন তোমরা রাতে ইবাদত করো এবং দিনে রোজা রাখো।






মহিমান্বিত এই রাতে ধ’র্ম’প্রাণ মুস’লমা’নরা পরম করুণাময় মহান আল্লা’হর অনুগ্রহ লাভের আশায় নফল নামাজ পড়েন, কো’রআন তি’লাওয়াত করেন এবং জিকিরে মগ্ন থাকেন।
অতীতের পাপ-অন্যা’য়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা এবং ভবিষ্যৎ জীবনের কল্যাণ কামনা করে মোনাজাত করেন মুস’লমানরা। এ রাতে সূর্যাস্তের পরেই আ’ল্লাহ দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং বলতে থাকেন, ‘ক্ষমা’প্রার্থী কেউ আছ কি?






আমি তাকে ক্ষ’মা করে দেব। রিজিকপ্রার্থী কেউ আছ কি? আমি তাকে রিজিক দেব। বিপদগ্রস্ত কেউ আছ কি? আমি তাকে বিপদ-মুক্ত করে দেব।’ আ’ল্লাহ এভাবে সকাল পর্যন্ত বলতে থাকেন। (সুনা’নে ইব’নে মা’জাহ, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৪৪৪, হাদিস: ১৩৮৮; সহিহ ইবনে হিব্বান: ৫৬৬৫)
হজ’রত মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করিম সা’ল্লা’ল্লাহু আলা’ইহি ওয়া সা’ল্লাম বলেছেন, ‘অর্ধশাবানের রাতে আ’ল্লাহ সৃষ্টির প্রতি রহমতের দৃষ্টি’পাত করেন। অতঃপর শিরককারী ও বিদ্বেষ পোষণ’কারী ছাড়া তার সমগ্র সৃষ্টিকে ক্ষমা করে দেন।’






(মুসনাদে আহমদ: ৬৬৪২) এই হাদিস হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) থেকেও বর্ণিত হয়েছে। (মুসনাদে বাজজার: ২০৪৫)। হজরত আয়িশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, ‘
একবার রাসু’লুল্লাহ সাল্লা’ল্লাহু আলা’ইহি ওয়া সা’ল্লাম রাতে নামাজে দাঁড়ালেন এবং এত দীর্ঘ সিজদা করলেন, আমার ধারণা হলো তিনি হয়তো ই”ন্তে’কাল করেছেন। আমি তখন উঠে তার বৃ’দ্ধা’ঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তার বৃ’দ্ধা’ঙ্গুলি নড়ল।






যখন তিনি সিজদা থেকে উঠলেন এবং না’মাজ শেষ করলেন, তখন আমাকে লক্ষ করে বললেন, ‘হে আয়িশা! তোমার কি এই আ’শঙ্কা হয়েছে যে আ’ল্লাহর রাসুল তোমার হক নষ্ট করবেন?’
আমি উত্তরে বললাম, ‘না, ইয়া রা’সুলুল্লাহ। আ’পনার দীর্ঘ সিজদা থেকে আমার আশঙ্কা হয়েছিল, আপনি ই’ন্তে’কাল করেছেন কি না।’ নবী সা’ল্লাল্লাহু আলা’ইহি ওয়া সা’ল্লাম বললেন, ‘
তুমি কি জানো এটা কোন রাত?’ আমি বললাম, ‘আ’ল্লাহ ও তার রা’সুলই ভালো জানেন।’রা’সুল (সা.) তখন ইর’শাদ করলেন, ‘এটা হলো অর্ধশা’বানের রাত।






আ’ল্লাহ তা’আলা অর্ধ’শাবা’নের রাতে তার বান্দার প্রতি মনোযোগ দেন এবং ক্ষমা প্রার্থ’নাকা’রীদের ক্ষমা করেন, অনু’গ্রহ’প্রার্থী’দের প্রতি অনুগ্রহ করেন আর বিদ্বেষ পো’ষণকা’রীদের তাদের অব’স্থাতেই ছেড়ে দেন।’ (শুআ’বু’ল ইমান, বায়হাকি: ৩/৩৮২-৩৮৩)
এছাড়া শবে বরাতে ও শাবান মাসের বাকি দিন’গুলোতে দিবারাত্র নফল ইবাদ’তে মশগুল হওয়া র’মজা’নের প্রস্তুতির অংশ। শেষ দুই দিন ব্যতীত পুরো শাবান মাসেই রোজা রাখা মুস্তা’হাব।






বিশেষত প্রতি চান্দ্র’মা’সের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ আইয়ামে বিদের রোজা রাখা সু’ন্নত। সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখা খাস সুন্নত। হজরত উম্মে সালামা (রা.) বর্ণনা’ করেন, রা’সুল (সা.) তিনটি আমল জীবনে কখনো ছাড়েননি- তা’হা’জ্জুদের নামাজ, আইয়ামে বিদের রোজা ও রমজা’নের শেষ ১০ দিনের ই’তিকাফ। (মুস’নাদে আহমাদ)’