ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার হয়ে কন্যা সন্তানের জন্ম দিলেন ইয়েমেনি নারী!

যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইয়েমেন থেকে পালিয়ে তুরস্কে এসেছিলেন ফাতেন আল ইউসুফি। কিন্তু ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্পে ওই নারী ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েন। প্রায় ১০ ঘণ্টা ধ্বংসস্তূপের নিচে থাকার পর তাকে বের করে আনেন উদ্ধারকর্মীরা। এরপরই ওই নারী এক ফুটফুটে শিশুর জন্ম দেন।
তার গর্ভের বয়স ছিল ৩৯ সপ্তাহ। গত সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) যখন ভূমিকম্প আঘাত হানে তার আগে তিনি সন্তান জন্মদানের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন।

ভূমিকম্পের পর তিনি ভবনের নিচে চাপা পড়েন। ধরেই নিয়েছিলেন আর বাঁচবেন না। কিন্তু ১০ ঘণ্টা পর উদ্ধারকর্মীরা তাকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।

সংবাদমাধ্যম বিবিসি’কে তিনি জানান, আমি বিশ্বাস করতে পারছি না যে আমি বেঁচে আছি।

তাকে উদ্ধারের পরই হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তাররা তার সিজার করেন। সিজারে তিনি একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। ওই শিশুর নাম রাখা হয় লুজাইন। যার আরবি অর্থ রূপা।

কিন্তু এরপরই আসে বড় দুঃসংবাদ। তাকে হাসপাতালে পৌঁছানোর পর তার বন্ধু হিশাম তার স্বামীকে উদ্ধারে জন্য আবার ঘটনাস্থলে যায়। কিন্তু ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন তার স্বামী ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে মারা গেছেন। ২৯ বছর বয়সী তার স্বামী আল আমিনির মরদেহ পরবর্তীতে তিনদিন পর উদ্ধার করা হয়। আল আমিনি ইনোনু বিশ্ববিদ্যালয়ে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন।

স্বামী হারানোর শোক নিয়েই ফাতেন নতুন মা হওয়ার কারণে ঘুম থেকে বঞ্চিত হন এবং তার নবজাতককে খাওয়ানো এবং ঘুমের রুটিনের সঙ্গে সামঞ্জস্য করার চেষ্টা করেন।

ফাতেন বলেন, শুরুটা খুবই কঠিন ছিল। কারণ এ ঘটনার পর মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি।

তিনি আরো বলেন, তবুও আমি কৃতজ্ঞ। আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাই যারা আমাকে সাহায্য করেছে এবং আমার পাশে দাঁড়িয়েছে।

ফাতেন বলেন, স্বামীকে নিয়ে আমরা আমাদের অনাগত সন্তানকে নিয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা করি। কিন্তু আল্লাহ সব পরিকল্পনার উর্ধ্বে। তিনিই সবকিছু ভালো জানেন। আমরা জানি না কোথায় আমাদের জীবন গিয়ে শেষ হবে।

তিনি বলেন, সন্তান জন্মদানের পর ইয়েমেনি এবং তুর্কি সম্প্রদায়ের সহকর্মী আমার প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।

ফাতেন ইস্তাম্বুলের কাছাকাছি কোকেলিতে এক বন্ধুর সঙ্গে চলে গেছে। আর তুরস্কে ইয়েমেনের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ তারিক শিশুটিকে দেখতে গেছেন।

ফাতেন এবং তার স্বামী ২০১৪ সালে ইয়েমেন থেকে পালিয়ে আসে। যখন ইরান সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা ইয়েমেনের রাজধানী সানা দখল করে নেয়।

এর পরের বছরই হুদি বিদ্রোহীদের বিতাড়িত করতে ইয়েমেনে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে সৌদি আরব। হামলার পর থেকেই অনেক ইয়েমেনি পালিয়ে তুরস্ক আশ্রয় নিয়েছে। পালিয়ে আসাদের সংখ্যা এখন প্রায় ২০ হাজার অতিক্রম করেছে।