টানা ইংরেজি বলতে পারে নিভৃত পল্লীর কিশোরী মাইশা!

গ্রামের এক স্কুলে তার হাতেখড়ি। সেখানকার স্কুলেই চলছে পড়াশোনা। শহরের নামি-দামি কোনো স্কুলেও পা রাখা হয়নি কোনো দিন। নেই কোনো আলাদা যত্নআত্তি। স্কুল শেষে ঘরের কাজে মাকে সাহায্যও করতে হয় নিত্যদিন।

এরপরও টানা কথা বলতে পারে ইংরেজিতে। কী সুন্দর সেই বাচনভঙ্গি। নিজের ইচ্ছে আর অদম্য চেষ্টায় ইংরেজি ভাষায় এমন দক্ষতা অর্জন করেছে নিভৃত পল্লীর কিশোরী মাইশা। সুন্দর করে ইংরেজি বলতে পারায় তার সুনাম নিজের গ্রাম ছাড়িয়ে আশেপাশের এলাকাসহ জেলা সদর জয়পুরহাটও চলে গেছে।

বলছিলাম ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাইশা ফাহামিদা রিশার কথা। রিশা জয়পুরহাট সদর উপজেলার নিভৃত পল্লী হেলকুন্ডা গ্রামের এক দিনমজুর পরিবারের সন্তান।

তার বাবা হতদরিদ্র মো. মামুনুর রশিদ, মা বিলি বেগম। বাবা পেশায় একজন দিনমজুর কৃষক, মা স্থানীয় কুটির শিল্পের কর্মী। দুই ভাইবোনের মধ্যে মাইশা ফাহামিদা ছোট। ছোট বেলা থেকেই সে ছিল মেধাবী।

দরিদ্র পরিবারে বাড়ির কাজের সহযোগিতা করার পাশাপাশি অনর্গল ইংরেজিতে কথা বলতে পারাতে স্থানীয়দের বাহবা পাচ্ছে মাইশা। ফসলি জমিতে বাবার কাছে খাবার দিতে গিয়েও মাইশা অনর্গল কথা বলে ইংরেজিতে।

উচ্চারণ এত চমৎকার যে, কথা শুনে চমকে যেতে হয়। কিন্তু মেয়েকে নিয়ে বাবা মামুনুর রশিদ ও মা বিলি বেগমের চাওয়াটা ছিল খুব সরল। মেয়ে চিকিৎসক-প্রকৌশলী কিংবা বড় চাকরিজীবী হোক— এমন কোনো প্রত্যাশা ছিল না তাদের।

তাদের ইচ্ছে ছিল পড়াশোনা শিখে বড় হয়ে কোনো একটা চাকরি করবে তাদের মেয়ে। তারপর ভালো একটা ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে দেবেন। কিন্তু ইংরেজিতে সুন্দর করে কথা বলতে দেখে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন এই বাবা-মা। বড় হয়ে তাদের মেয়ে ডাক্তার হবে, গরীব অসহায় মানুষদের চিকিৎসা সেবা দিবে— এমন স্বপ্ন দেখছেন তারা।

মাইশা ফাহামিদা জানায়, ইংরেজি শেখার খুব ইচ্ছে ছিল। বিভিন্ন ভিডিও ও ক্লাসে স্যারদের বক্তব্যে বাংলা ভাষার পাশাপাশি ইংরেজি ভাষা গুরুত্ব শুনতে শুনতে সেখান থেকে সে অনুপ্রাণিত হয়। এরপর ইংরেজি শেখা শুরু তার। এক সময় ইংরেজিটা ভালোই রপ্ত করল সে। বাড়িতেই কাজের পাশাপাশি বা বসে বসে বলতে ও ভুলগুলো শোধরানোর চেষ্টা শুরু করে সে। এরপর এক সময় ভালো ইংরেজি বলতে শিখে নেয় সে।

মাইশা আরও জানায়, যখন নিজে নিজেই কথা বলা শুরু করলাম, তখন অনেক মানুষ নেতিবাচক মন্তব্য করেছিল। কিন্তু সেই মানুষজনই এখন প্রশংসা করছে। আমি কথা বলার যে ইংরেজি জ্ঞান অর্জন করেছি, তা এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব। সব শেষে বলব, চেষ্টা থাকলে সব সম্ভব।

ভবিষ্যতে কি হওয়ার ইচ্ছে জানতে চাইলে মাইশা জানায়, বাবা-মায়ের ইচ্ছে বড় হয়ে যেন আমি ডাক্তার হই। আমি তাদের স্বপ্নটা পূরণ করতে চাই। ডাক্তার হয়ে পরিবারের সহযোগিতার পাশাপাশি গরীব অসহায়দের চিকিৎসা সেবা দিয়ে সহযোগিতা করতে চাই।

মাইশার বাবা মো. মামুনুর রশিদ বলেন, মেয়ে স্কুল থেকে আসার পর বাসায় কাজের পাশাপাশি ইংরেজি শিখতো। এরপর অনর্গল ইংরেজিতে কথা বলতে শুরু করলে আমার স্বপ্ন পরিবর্তন হয়ে যায়। আমি চাই সে চিকিৎসক হয়ে অসহায়দের সেবা করবে। সবাই দোয়া করবেন মেয়ের জন্য।

মাইশার বড় ভাই রোহান বলেন, আমার একমাত্র বোন মাইশা আমাদের গর্ব। সহজ-সরল এই বোন ইংরেজিতে কথা বলতে পারছে ভাবতেই পারছি না। আজ অনেক ছেলে-মেয়ে তার ইংরেজিতে কথা বলা শুনতে আসে। তা দেখে অনেক ভালো লাগে।

স্থানীয় যুবক সাব্বীর বলেন, মাইশা আমাদের এলাকার গর্ব। সে এলাকার জন্য সুনাম এনে দিয়েছে। তার মাধ্যমে অনেক ছেলে মেয়েরা অনুপ্রাণিত হয়েছে। তারাও বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি শেখা শুরু করেছে।

শিক্ষার্থী শামীমা আক্তার তিনি বলেন, মাইশা আপুর ইংরেজি শুনতে খুব ভালো লাগে। আমরা তাকে দেখে চেষ্টা করছি শেখার। আমাদের এলাকার জন্য আইডল তিনি।

পুরনাপৈল ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম সৈকত বলেন, আমার ইউনিয়নে এই রকম মেধাবী মেয়ে আছে শুনে আমি তার সঙ্গে দেখা করেছি। তাকে অভিনন্দন জানিয়েছি। হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে মাইশা। তাকে আমি আমার পক্ষ থেকে যথাসাধ্য চেষ্টা করব, যেনো সে পড়াশোনা ঠিকঠাক মত চালিয়ে যেতে পারে। ঢাকামেইল