ছেলের লাশ দাফনে বাধা বাবার, ন্যায্য সম্পদ বুঝে নিতে চায় স্ত্রী-সন্তান!

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে নিজ সন্তানকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফনে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বাবার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় স্বামীর লাশ দাফনের আগেই স্ত্রী ও সন্তানের ন্যায্য পাওনা আদায়ে অবস্থান নেন স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস বিউটি। সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় হাজীগঞ্জের মাতৈন গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এরপর হাজীগঞ্জ থানার পুলিশের একটি টিম ও স্থানীয় চেয়ারম্যান বিষয়টি সুরাহা করে মৃতের লাশ দাফনের ব্যবস্থা করেন।

মৃত কামাল পাটওয়ারীর স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস বিউটি জানান, প্রায় ২৩ বছর আগে তার সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় উপজেলার ৫নং সদর ইউনিয়নের পাটওয়ারী বাড়ির আবদুল কাদের পাটওয়ারীর ছেলে কামাল পাটওয়ারীর। তিনি কালো হওয়ায় তার শ্বশুর-শাশুড়ি কামালের স্ত্রী হিসেবে তাকে মেনে নেয়নি। তার ওপর বিভিন্ন সময় নির্যাতন করতেন। বিশেষ করে আমার শাশুড়ি ও ননদদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিলেন বলে দাবি করেন বিউটি।

বিউটি আরো জানান, ২০০০ সালের দিকে আমার বাবার পরিবার টাকা খরচ করে কামালকে বিদেশ পাঠায়। কামাল বিদেশ যাওয়ার পর সব টাকা বাবার নামে পাঠাতেন তারপরও সে তার বাবা-মা ও বোনদের মন জয় করতে পারেননি। এক পর্যায়ে কামাল অসুস্থ হয়ে পড়লে বিদেশ থেকে দেশে চলে আসেন। সেই সময় কামালকে তার পরিবারের কেউ কোনো চিকিৎসা করাতে এগিয়ে আসেননি। এক পর্যায়ে তাকে আমি স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম এমপির সহযোগিতায় ঢাকায় চিকিৎসা করাই। চিকিৎসারত অবস্থায় কামাল মৃত্যুবরণ করলে লাশ দাফন করার জন্য বাড়িতে আনি। কিন্তু আমার শ্বশুর কামাল তার সন্তান নয় বলে পারিবারিক কবর স্থানে দাফনে বাধা দেন। এখন আমি ও আমার সন্তানের ন্যায্য দাবি শ্বশুর থেকে বুঝে না নেওয়া পর্যন্ত লাশ দাফন করতে দেব না।

এদিকে পাটওয়ারী বাড়িতে কয়েক ঘণ্টা অবস্থান করেও মৃত কামালের বাবা আবদুল কাদেরের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি সংবাদকর্মীদের। তিনি তার বিল্ডিংয়ের দরজা জানালা বন্ধ করে পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে ঘরের ভেতরে অবস্থান নেন। মৃত কামালের ভাই স্বপন বলেন, কামাল প্রসঙ্গে আমি কিছুই বলতে পারব না।

পাটওয়ারী বাড়ির নুরুল আলম পাটওয়ারীসহ বাড়ির অন্যরা জানান, আবদুল কাদের খুবই ধূর্ত প্রকৃতির লোক। এর পরেই এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে আবদুল কাদেরের ঘরে হামলার করার চেষ্টা চালায়। পরে বাড়ির অন্য লোকজনের সহযোগিতায় উত্তেজিত লোকদের নিবৃত্ত করা হয়।

হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ জোবাইর সৈয়দ জানান, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ প্রধানীয়া সুমন ও এসআই নাজিমউদ্দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ দাফনের ব্যবস্থা করেন।

চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ প্রধানীয়া সুমন জানান, কামালের স্ত্রী ও সন্তানের দাবির প্রেক্ষিতে তাদেরকে থাকার জন্য কামালের ক্রয়কৃত সোয়া ৯ শতাংশ জমি স্ত্রী বা তার ছেলেদের নামে দেওয়া হবে। এই মর্মে রাতেই একটি স্ট্যাম্প করা হবে। মৃত কামালের বাবা আবদুল কাদের কামালের স্ত্রী ও সন্তানদের নামে এ জমি দিতে রাজি হয়েছেন। সেই অনুযায়ী কাজ চলছে।