জন্ম ১৯৯১ সালের ১২ মে। জন্মের সময় অন্য আর দশটি সাধারণ শিশুর মতোই ছিলেন জাকির হোসেন রিশাত। বয়স বাড়লেও শারীরিকভাবে আর বাড়েননি তিনি। এখন বয়স ৩২ বছর, কিন্তু তার উচ্চতা মাত্র ৩০ ইঞ্চি। ফেনীর পরশুরাম উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের উত্তর চন্দনা গ্রামের বাসিন্দা তিনি।






তাকে দেখতে প্রতিদিন নানা প্রান্তের মানুষ ছুটে আসেন। তাকে দেশের ক্ষুদ্র মানব হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া যায় কিনা, বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন জেলা প্রশাসক।
পরিবারিক সূত্রে জানা যায়, ৩২ বছরের রিশাতের ভরসা মা নুর হাবাই। ছেলেকে গোসল, খাওয়া থেকে শুরু করে পোশাক পরিয়ে দেওয়াসহ যাবতীয় কাজ করেন তার মা। তবে মাঝে মাঝে এলাকার লোকজনের রিকশা ও টমটমের সহযোগিতায় স্থানীয় দোকানে গিয়ে কিছু সময় কাটান তিনি। স্থানীয়দের দেওয়া কিছু টাকা পয়সা আর প্রতিবন্ধী ভাতার টাকায় চলে রিশাতের জীবন।






জানা যায়, চন্দনা গ্রামের দিনমজুর মো. মোরশেদ খন্দকারের দুই ছেলে এক মেয়ে। বড় ছেলে আজিম উদ্দিন তিনি বিয়ে করে আলাদা হয়ে যান। মোরশেদ খন্দকারের দ্বিতীয় সন্তান জাকির হোসেন রিশাতের বয়স বাড়লেও শারীরিক গঠনে বেড়ে উঠেনি। মোরশেদ খন্দকারের তৃতীয় মেয়ে মোসাম্মাৎ নিপার বয়স ৩৬। ১০ বছর আগে তার বিয়ে হয়েছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুর রহিম জানান, উচ্চতার সঙ্গে ওজনও কম রিশাতের। জন্ম থেকে রিশাতকে কম ভুগতে হয়নি। একজন স্বাভাবিক মানুষ যা যা করতে পারেন, তা করতে পারেননি তিনি। জীবনে চলা বেশ কঠিন তার জন্য। ছোট বেলায় স্কুলেও গিয়েছিলেন। কিন্তু স্কুলে শিক্ষার্থীদের নানা মন্তব্য শুনতেন বলে পড়াশোনা আর করেননি তিনি। ছয় মাস আগে মারা যান বাবা। বড় ভাই পরিবার নিয়ে আলাদা। বর্তমানে তার শেষ অবলম্বন মা। প্রতিবন্ধী ভাতা পেলেও মানববেতর জীবন পার করছেন রিশাত।






রিশাদের মা নুর হাবা জানান, সারা বছর চিকিৎসা ও শারীরিক দুর্বলতার কারণে চরম কষ্টে দিনযাপন করতে হচ্ছে। তাছাড়া পরিবারের আয়-রোজগার করার মতো কেউ না থাকায় বর্তমানে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মোশারফ হোসেন জানান, রিশাত প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন। তার বয়স ৩২ হলেও আকৃতির দিক থেকে এখনো শিশুর মতো।
পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা শামসাদ বেগম বলেন, বিষয়টি আমি আপনাদের কাছে শুনলাম। রিশাতকে পরবর্তীতে সবরকম সহযোগিতা দেওয়া হবে।






ফেনী জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ-উল হাসান বলেন, রিশাতকে দেশের ক্ষুদ্র মানব হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া যায় কিনা, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি তাকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।